টিসিবির পণ্য কেনার জন্য আর কাউকে ট্রাকের পেছনে লাইনে দাঁড়াতে হবে না। কিংবা ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকতে হবে না ওএমএসের দোকানের সামনে। এখন থেকে টিসিবি যাবে ক্রেতার দুয়ারে। চাল, ডাল, চিনি, তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য নিয়ে ক্রেতার বাড়ির কাছাকাছি থাকবে টিসিবির ডিলার। প্রতিটি এলাকায় থাকবে ডিলারের নিজস্ব দোকান।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র এসব তথ্য জানিয়েছে।
স্বল্প আয়ের মানুষকে স্বল্পমূল্যে চাল, ডাল, চিনি, তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য দেওয়ার লক্ষ্য নিয়েই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সরকারি প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। এতোদিন টিসিবির ডিলাররা ট্রাকে করে পণ্য নিয়ে যেকোনো রাস্তায় দাঁড়াতেন। ইচ্ছামাফিক যেকোনো নারী-পুরুষ ট্রাকের পেছনে লাইনে দাঁড়িয়ে কিনতে পারতেন টিসিবির পণ্য।
বর্তমানে টিসিবির সেই ট্রাকসেল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আর যে কেউ চাইলেই কিনতে পারবেন না টিসিবির পণ্য। এখন থেকে সরকারের দেওয়া বিশেষ কার্ডধারীরাই টিসিবির পণ্য কেনার সুযোগ পাবেন। আর ক্রেতা যখন চাইবেন, তখনই ডিলারের দোকান থেকে কিনতে পারবেন পণ্য।
সূত্র জানিয়েছে, নতুন নিয়মে ডিলারকে ডিও বরাদ্দের সিস্টেমও বদলে দেওয়া হয়েছে। আগে টিসিবির জেলা আঞ্চলিক কার্যালয়ের কর্মকর্তারা বরাদ্দপত্র বা ডিও ইস্যু করতে পারতেন। তবে এখন ডিও ইস্যু করবেন শুধুমাত্র একজন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক কিংবা ইউএনও।
তাছাড়া আগে পণ্য কেনার জন্য ক্রেতাদের নির্দিষ্ট কোনো তালিকা ছিল না। এখন সারা দেশে জেলা-উপজেলা প্রশাসন ও সিটি করপোরেশনের সহায়তায় স্বল্প বা নিন্ম আয়ের এক কোটি পরিবারের তালিকা করা হয়েছে। তাদের সরকার নির্ধারিত ফ্যামিলি কার্ড দেওয়া হচ্ছে। ওই কার্ড দেখিয়েই তারা টিসিবির পণ্য কিনবেন।
বর্তমানে ১১০ টাকা লিটার দরে সয়াবিন তেল, ৫৫ টাকায় এক কেজি চিনি, ৬৫ টাকায় এক কেজি মসুর ডাল, ৫০ টাকায়িএক কেজি ছোলা এবং ২০ টাকায় এক কেজি পেঁয়াজ বিক্রি করছে টিসিবি।
দেশে ১৯৭২ সালের ১ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতির আদেশে টিসিবি প্রতিষ্ঠিত হয়। মূলত দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখতে নির্দিষ্ট কিছু নিত্যপণ্যের আপৎকালীন মজুত গড়ে তুলে তা ভোক্তা সাধারণের কাছে সরবরাহ করার লক্ষ্যেই গড়ে তোলা হয়েছিল টিসিবি।
টিসিবি তার লক্ষ্য বাস্তবায়নে কিছু কার্যাবলী পরিচালনা করে থাকে। তার মধ্যে সরকারের নীতিমালা অনুযায়ী পণ্য কেনা, আমদানি ও রপ্তানি পরিচালনা এবং সরকারের নির্দেশনা অনুসারে সময়ের প্রয়োজনে জরুরি পণ্যের বাফার স্টক গড়ে তোলা এবং তা মজুত রাখা অন্যতম।
এছাড়া আমদানি পণ্য বা মালামাল বিক্রয় ও বিতরণের ব্যবস্থা করা এবং সেজন্য ডিলার বা এজেন্ট নিয়োগ করাও প্রতিষ্ঠানটির গুরুত্বপূর্ণ কাজ।
দেশে দ্রব্যমূল্যের বাজার স্থিতিশীল রাখতে টিসিবির গুরুত্ব অনেক বলেই মনে করে সরকার।
এ প্রসঙ্গে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, সরকার টিসিবির মাধ্যমে সাধারণত নিম্ন আয়ের মানুষকে সাশ্রয়ী মূল্যে কয়েকটি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহ করে থাকে। এ খাতে বিপুল অর্থ ভর্তুকি দেয় সরকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার স্বল্প আয়ের মানুষের কথা চিন্তা করেই টিসিবির কার্যক্রম বাড়িয়েছে। সরকারের নতুন সিদ্ধান্তে এক কোটি পরিবারের জন্য দেওয়া কার্ডে উপকৃত হবেন দেশের অন্তত ৫ কোটি মানুষ।
জানতে চাইলে টিসিবির চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আরিফুল হাসান বলেন, আগে মানুষকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে নানা বিড়ম্বনার মধ্য দিয়ে পণ্য পেতে হতো। এখন আর কাউকে কোনো কষ্ট পোহাতে হবে না। নিজেদের সময়-সুযোগ মতো নির্দিষ্ট ডিলারের দোকান থেকে পণ্য কিনতে পারছেন কার্ডধারীরা।