রাজধানী ঢাকার সড়ক থেকে যেন বাস উধাও হয়ে গেছে। কোনো রাস্তাতেই আজ শনিবার ভোর থেকে কোনো বাস চলতে দেখা যায়নি। সড়কে চলছে কেবল রিকশা ও সিএনজি চালিত অটো। মোড়ে মোড়ে দাঁড়িয়ে আছে রাইডশেয়ারিং মোটরসাইকেল। আর মাঝেমধ্যে চোখে পড়ছে গণমাধ্যমের দুয়েকটি গাড়ি। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ মানুষ।
ঢাকায় আজ বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশ ঘিরেই বাস চলাচল বন্ধ রেখেছে পরিবহনমালিকরা। যদিও ঢাকার পরিবহনমালিকদের সংগঠন জানিয়েছিল, ১০ ডিসেম্বর বিএনপির সমাবেশের দিনও বাস চলবে। তবে বাস্তব পরিস্থিতি দেখা গেল ভিন্ন।
ঢাকার পল্টন মোড়ে সকাল ১০টার দিকে দাঁড়িয়ে ছিলেন প্রায় অর্ধশত মানুষ। সবাই দুরের অফিসগামী। বাসের জন্য দাঁড়িয়ে থেকে থেকে হতাশ সবাই। কোনো গন্তব্যেরই বাস আসছে না দেখে, কয়েকজন ভাগাভাগি কর উঠে যাচ্ছেন সিএনজি অটোরিকশায়। মোটামুটি কাছাকাছি দুরত্বের অনেকে রিকশা নিয়েই চলে যান অফিসে।
মালিবাগ রেল লাইনের মোড়ে বেশকিছু রিকশার জটলা। অনেকেই দাঁড়িয়ে আছেন রামপুরা ব্রিজ কিংবা বাড্ডার দিকে যাওয়ার জন্য। এই মোড়ে মিনিটে মিনিটে তুরাগ পরিবহনের অসংখ্য বাস এলেও আজ কোনো গাড়ি নেই। অগত্যা রিকশায় করেই চলে গেলেন অনেকে। উত্তরার দিকে কয়েকজন গেলেন সিএনজি অটোরিকশায়, অতিরিক্ত ভাড়া স্বীকার করেই।
মোহাম্মদপুরের বছিলা তিন রাস্তার মোড়ে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে দেখা যায়, স্বাধীন পরিবহনের একটি বাস যাত্রী তুলছে। আর কোনো বাস নেই। বছিলা থেকে টাউনহল পর্যন্ত রাস্তায় আর কোনো বাস চলতে দেখা যায়নি৷ ওই সড়কে কয়েকটি লেগুনা চলতে দেখা গেছে।
মিরপুরের দারুস সালাম এলাকায় বাসের জন্য দাঁড়িয়ে ছিলেন সুমন। তিনি এক অসুস্থ আত্মীয়কে দেখতে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে যাবেন। সুমন বলেন, ডেঙ্গু রোগ নিয়ে হাসপাতালে এক আত্মীয় ভর্তি আছেন। তাকে দেখতে যাচ্ছি। কিন্তু কোনো বাস পাচ্ছি না।
একইভাবে কল্যাণপুর, শ্যামলী, টেকনিক্যাল ও গাবতলী রোড এলাকায়ও কোনো বাস চলতে দেখা যায়নি। গাবতলী গিয়ে সাভারের দিক থেকেও কোনো বাস ঢাকার দিকে ঢুকতে দেখা যায়নি।
বিএনপির সমাবেশ ঘিরে গত কয়েকদিন ধরে রাজধানীতে চলছে অস্বস্তিকর পরিস্থিতি। নয়াপল্টনে বুধবার পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়েছে। এতে মারা গেছেন একজন। সংঘর্ষের জের ধরে পুলিশ বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ প্রায় সাড়ে চারশত নেতাকর্মীকে আটক করে কারাগারে দিয়েছে।
অবশেষ জেলের বাইরে থাকা নেতারাই আজ রাজধানীর সায়েদাবাদ সংলগ্ন গোলাপবাগ মাঠে সমাবেশ করছেন। মূলত সমাবেশে লোকসমাগম ঠেকাতেই অলিখিত বাস ধর্মঘট করছে পরিবহনমালিকরা।
যদিও ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি বৃহস্পতিবার সভা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, ১০ ডিসেম্বর ঢাকা শহর, শহরতলি ও আন্তজেলা রুটে বাস চলাচল স্বাভাবিক থাকবে।
বাস চলাচল স্বাভাবিক রাখার ঘোষণার পরও সড়কে বাস উধাও হওয়ার কারণ ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, আজ রাস্তায় তো মানুষই নেই। যাত্রী নেই বললেই চলে। তাই বাস বের করছেন না মালিকরা। আর সঙ্গে তো নাশকতার ভয় আছেই। তবে দুপুরের পর বাস চলবে।